nude art body image

সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি রাগ-না-করা খোলা চিঠি

প্রিয় সঙ্গীতা দি,

আপনি আমায় চেনেন না। আমিও যে চিনি তেমন নয় তবে আপনার নাম জানি, লেখাও পড়েছি।আমি আপনার ফেসবুক বন্ধুতালিকাতেও নেই কিন্তু আমার পরিচিত অনেকেই আছেন ফলে সেই সূত্রে আপনার পোস্ট মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে। খারাপ লাগে, ব্যক্তিগত ভাবে আঘাত লাগে যখন ভাড়াবাড়িতে থাকা, খসখসে চামড়া, ফুটপাথ থেকে কেনা সস্তার চাদর আর দড়িতে ঝুলে থাকা গামছাকে ব্যঙ্গের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। খারাপ লাগে যখন দেখি আপনি মনে করে ক্রপ টপ পরা একটি মেয়েকে ‘জায়গা ছেড়ে’ দিতে হলে পুরুষকে ‘অদৃশ্য’ হয়ে যেতে হবে। হতবাক হয়ে যাই যখন দেখি নিজে নিজেই নারীবাদের একটা মিথ্যা সংজ্ঞা তৈরি করে সেটাকে সিউডো নারীবাদ বলে ডাকছেন। একটি নির্দিষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিত টেনে গোটা মিটু আন্দোলনকে অন্তঃসারশূন্য বলে দিচ্ছেন।

সেই জন্যই এই চিঠি লেখা, যাতে আপনার সঙ্গে একটা খোলাখুলি আলোচনার পরিসর তৈরি করা যায় ফেসবুকীয় ভুল বোঝাবুঝির বাইরে গিয়ে। আপনার ঠিকানা জানলে হয়তো পোস্টই করতাম, তবে যে কথাগুলো লিখতে চাইছি সেটা আরও বৃহত্তর পরিসরে আলোচনা হওয়া উচিত বলেও মনে হয়, তাই খোলা চিঠিই লিখলাম।

আপনি বলতে পারেন, এবং বলছেনও যে আপনার দেওয়াল বলে আপনি যা ইচ্ছা লিখতে পারেন। অবশ্যই পারেন। কিন্তু আপনি তো লেখক। ভাষা কাঠামো কী ভাবে আক্রমণ হয়ে উঠতে পারে তা তো আপনার জানার কথা। আপনার লেখাপত্রর বিশেষ ভক্ত নই বটে তবে আপনার লেখকসত্ত্বা আছে বলেই তো ধরে নেওয়া যায়, এত দিন ধরে আমারই ভাষায় লিখে আপনি এত বিখ্যাত হয়েছেন, আমার ভাষার এত মানুষকে আপনি সাহিত্যরসের খোরাক দিয়েছেন, সম্প্রতি অন্য ভাষায় অনুবাদও হয়েছে আপনার গল্প সংকলন, বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষার অন্যতম প্রতিনিধি আপনি। আপনার কথার গুরুত্ব আছে, ভার আছে, সমাজে একটা প্রভাব আছে। আর সেই কারণেই আপনার কথার উত্তর দেওয়াটাও জরুরি। অনেকে দেখছি রেগে গেছেন, আপনার ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাবে তাঁরাও ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন, রাগ দেখিয়ে ফেলছেন। দুঃখ পাবেন না। মেয়েদের এই এক জ্বালা। তারা মনে করে কয়েক হাজার বছর ধরে গুমরে থাকার পর রেগে যাওয়ার তাদের অধিকার আছে। বাদ দিন। আমি ভালো করে কথা বলছি, আমার কথা শুনবেন তো?

সত্যি বলতে কি, এই যে কিছু দিন পর পর আপনি একটা করে আক্রমণাত্মক পোস্ট ছাড়েন, তাতে আমার অনেক সময়েই মনে হয় আপনি হয়তো একটু বিতর্ক বাধাতেই চাইছেন, কিঞ্চিৎ উপভোগই করছেন বিষয়টা। আপনার যথেষ্ট বয়স হয়েছে, মানে যতটা বয়স হলে মানুষকে পরিণতমনস্ক বলে ধরে নেওয়া যায়, পড়াশোনাও আছে বলে জানি, তাহলে এতটা গোড়ায় গলদ কেন থেকে যাচ্ছে? হয় আপনি গোটা বিষয়টা করছেনই মজা পাওয়ার জন্য, নয়তো সত্যিই আপনার বোঝাপড়ায় অন্তর আছে। এটা ধরে নিতেই পছন্দ করব যে প্রথম আচরণটি করার মত দায়িত্বজ্ঞানহীন আপনি নন। দ্বিতীয়টি যদি হয়ে থাকে সেই আশাতেই এই চিঠি লিখছি। অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী বটে, তবে তার সংশোধনও সম্ভব বলেই আমি এখনও পর্যন্ত বিশ্বাস করি। আমি কিন্তু আপনাকে শত্রু বলে ভাবতে চাইছি না, যতই আপনি আমার/আমাদের দিকে ঘৃণা ছুঁড়ে দিন আপনার ‘ব্যক্তিগত’ পোস্টগুলির মাধ্যমে। একটু লম্বা হতে চলেছে চিঠিটা, অনেকগুলি বিষয় আছে তো, কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না। ধৈর্য্য ধরে পড়লে বাধিত হব।

প্রথমে আসি অর্ঘ্য বসুর প্রসঙ্গে। সোজাসুজিই বলছি, কারণ আপনার পোস্টটির অঙ্গে কোথাও এ নাম না থাকলেও শেষের হ্যাশট্যাগে আপনি স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রেক্ষিতটা। তাই প্রেক্ষিত ছাড়া আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে তর্কে যাওয়া অর্থহীন। অর্ঘ্যবাবুকে আমি চিনি না, তাঁর কাজও দেখিনি। পরিচিত বর্গে শুনছি তিনি ভালো মানুষ ছিলেন, যে অভিযোগের জেরে তিনি অবসাদে ঢুকে যান ও পরে আত্মহত্যা করেন বলে জানা যাচ্ছে তা সত্য ছিল না। বহু বছর আগের একটা ঘটনা নিয়ে মিটু আন্দোলনের সময় নাম কেনার চেষ্টায় ঐ অভিযোগ আনা হয়েছিল এমনও বলছেন অনেকে। এইখান থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে যে এই ধরণের ঘটনায় ‘ডিউ প্রসেস’ কেন মানা হবে না? কেন শুধুমাত্র একটা অভিযোগের জেরে কারও জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে এমন ভাবে, বিশেষ করে তা যখন প্রমাণিতই নয়? এগুলো সবই সঙ্গত প্রশ্ন। আমার নিজেরও এ বিষয়ে নানা সময়ে প্রশ্ন ও দ্বিধা জেগেছে।

কিন্তু সব কিছুরই তো প্রেক্ষিত থাকে, যেমনটা আপনি জানেন। মিটু-রও আছে। কেন বলুন তো এতগুলো মেয়ে একসাথে চারদিকে ক্ষেপে উঠল এমন করে? কেন তাদের আর ডিউ প্রসেস সহ্য হল না? কেন তারা হঠাৎ করে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের কথা বলতে এল? ডিউ প্রসেস যে কোনও দিন কারও হোমেও লাগেনি যজ্ঞেও লাগেনি সে কথা কি আপনি জানতেন না? থানায় ধর্ষণের বা গৃহহিংসার অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল এমন কোনও মেয়েকে আপনি চেনেন না? জানেন না তারা সাধারণতঃ কী ব্যবহার পেয়ে থাকে? ছেড়ে দিন। ঘনিষ্ঠ প্রিয়জন যখন ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তার মানসিক অভিঘাত আপনি হয়তো জানেন না, ঈশ্বর করুন আপনার জানার দরকারও যেন কোনও দিন না হয়, কিন্তু বুঝতেও কি পারেন না? বহু বছরের প্রিয় বন্ধু আপনার অসুস্থ বা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থার সুযোগ নিয়ে বুকে হাত দিলে সমস্ত ভরসা-বিশ্বাস ভেঙে চুরমার হয়ে যায়নি হয়তো কোনও দিন, কিন্তু হলে কী হয় সেটা ভেবে দেখার, কল্পনা করতে পারার মত বোধ তো আপনার মত শিক্ষিত, অভিজ্ঞ, পরিণতমনস্ক মানুষের থাকার কথা? ক’টা মেয়ে পারে হাজার বছরের সোশ্যাল কন্ডিশনিং পেরিয়ে রুখে দাঁড়াতে? রুখে দাঁড়ানোর পর বেঁচে থাকে ক’টা মেয়ে? বেঁচে যারা থাকে, তাদের মধ্যে মাথা উঁচু করে থাকতে পারে ক’টা মেয়ে? ভয়ে মুখ বুজে মেনে নিলেও সবাই বলবে বলেনি কেন, বললে বলবে প্রমাণ কোথায়, সঙ্গে সঙ্গে বললে বলবে প্রতিশোধস্পৃহা, বহু বছর পেরিয়ে সাহস জুটিয়ে বললে বলবে এত দিন পরে বলছে মানেই নাম কেনার চেষ্টা। নির্যাতনের অভিযোগ তুলে নাম কিনতে পেরেছে এমন ক’টা মেয়েকে আপনি চেনেন সঙ্গীতা দি? আর এত সব কিছু জেনেও কি আপনি বলবেন মেয়েদের কথা বলার এই জায়গাটুকু থাকা উচিত নয়? আপনি কি বুঝতে পারছেন না যে সমস্যাটা মেয়েদের অভিযোগ তোলায় নেই, আছে মানুষেরই গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসানোর মনোবৃত্তিতে?

সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসব, এখন এই নির্দিষ্ট ঘটনাটির কথা সেরে নিই। নির্যাতনের প্রমাণ চাওয়া অন্যায় নয়। কিন্তু সেই চাওয়ার মধ্যে সহমর্মিতা থাকা জরুরি। রাজনৈতিক কারণেই জরুরি। মেয়েরা কেন সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের নির্যাতনের কথা বলতে চায় সেটা বুঝলে এই সহমর্মী স্বরের প্রয়োজনটা বুঝতে তো অসুবিধা থাকার কথা নয়। কী অসম্ভব যন্ত্রণা থেকে মানুষ আত্মহত্যা বেছে নেয় তা আমার থেকে ভালো খুব কম মানুষ জানে। এই পরিস্থিতিতে আমি নিজেও ছিলাম একদিন। অর্ঘ্য বসুকে না চিনলেও তাঁর প্রতি আমার সহমর্মিতা আছে। অভিযোগ যদি মিথ্যা হয়ে থাকে তবে তা মাথায় নিয়ে চলে যাওয়া মর্মান্তিক। কিন্তু তাঁর প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে আপনি একটা অত্যন্ত জরুরি আন্দোলনকে নস্যাৎ করছেন কী ভাবে?

ছাড়ুন। নাহয় নস্যাৎই করলেন। কিন্তু তাতে মেয়েদের পোশাকের কথাই বা আসছে কী ভাবে? আগেই বলেছি আপনাকে আমি চিনি না, অতএব ঐ পোস্টটি ছাড়া আপনার সম্পর্কে আমার খুব একটা কিছু জানাও নেই। পড়ে তো এটাই মনে হয় যে মেয়েদের উপর নির্যাতনের কারণ হিসেবে আপনি তাদের পোশাক নির্বাচন এবং শরীর উন্মুক্ত রাখা না রাখার স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। মেয়েদের নিজেদের শরীরের উপর অধিকারকে, তাদের যৌনসত্ত্বাকে স্বীকার করতে গেলে পুরুষের যৌনসত্ত্বাকে অস্বীকার করতে হবে, এমন কুযুক্তি তুলে আনছেন।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ইউরোপে মেয়েরা যখন ভোটাধিকার চেয়ে আন্দোলন করছে, বেশ একটা গেল গেল রব উঠেছিল, বহু ব্যঙ্গচিত্রও তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে একটি বেশ মজার। সেখানে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, মেয়েরা যদি প্যান্ট পরতে শুরু করে তাহলে ছেলেরা কী পরবে। ভোট দিতে গেলে প্যান্ট কেন পরতে হবে সে প্রশ্ন তো ওঠেই, তাছাড়াও মেয়েরা যদি বা প্যান্ট পরতে শুরুও করে তাহলে ছেলেদের প্যান্ট পরতে অসুবিধা কেন হবে সেটাও বোঝা দায়। জানি এটা আপনার হাস্যকর লাগছে, লাগারই কথা। আপনি  শিক্ষিত মানুষ, আপনি নিশ্চয় জানেন যে পৃথিবীতে প্যান্টের সংখ্যা সীমিত নয়, মেয়েরা প্যান্ট পরতে শুরু করলে ছেলেদের প্যান্টের কাপড়ে টান পড়ার আশঙ্কাও অমূলক। তাহলে হঠাৎ আপনার এটা মনে হল কেন যে মেয়েদের পোশাক পরার স্বাধীনতা বজায় রাখতে হলে ছেলেদের পোশাকে টান পড়বে? মেয়েদের যৌনসত্ত্বা প্রকাশের অধিকারকে স্বীকার করতে হলে ছেলেদের সে অধিকার খর্ব হবে?

অর্ঘ্য বসুর আত্মহত্যাই যদি আপনাকে সমগ্র মিটু আন্দোলন তথা আপনার পাড়ার মেয়েটির ক্রপ টপ তথা ফেসবুকে কোনও মেয়ের ন্যুড ছবি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে এমন খড়্গহস্ত করে তোলে, তাহলেও তো যুক্তিপরম্পরা দাঁড়াচ্ছে না, বরং আরও ভয়ঙ্কর দিকে মোড় নিচ্ছে। আপনি কী কোনও ভাবে এটা বলতে চাইছেন যে ঘটনার সময়ে অভিযোগকারিনীর পরণে থাকা পোশাক কোনও ভাবে ঘটনার জন্য দায়ী ছিল এবং সেই কারণেই অর্ঘ্য বসু নির্দোষ, কারণ তিনি মেয়েটির পোশাকের কারণে উত্তেজিত হয়ে নিজের স্বাভাবিক যৌনসত্ত্বা প্রকাশ করছিলেন মাত্র? অর্ঘ্য বসু যদি নির্দোষ হয়ে থাকেন তবে এই তুলনা মারাত্মক, আপনি তাঁর স্মৃতি তথা অবসাদ ও আত্মহত্যার সম্পূর্ণ ঘটনাপরম্পরাকেই অপমান করছেন। আপনার যুক্তিপরম্পরা তো তাঁকে শিশ্নসর্বস্ব একটি মানুষ বলেই প্রতিপন্ন করছে যাঁর নিজের কামনা সংবরণের ক্ষমতাটুকুও নেই। আবারও বলছি, ঘটনার সত্যাসত্য আমি জানি না, আপনার মনে কী আছে না আছে তাও জানি না, পাবলিক পোস্টে আপনার বক্তব্য থেকেই কিন্তু এই প্রশ্নগুলি উঠে আসা সম্ভব।

এই পোস্টের কমেন্ট সেকশনেই আপনি এক সমালোচকের ফেসবুকে ন্যুড ছবি দেওয়া বিষয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। আপনার সমালোচনা করা হলে সেই সমালোচনার উত্তর আপনি একশো বার দেবেন, কিন্তু এর সঙ্গে সেই সমালোচকের ন্যুড ছবি পোস্ট করা না করার কী সম্পর্ক? তিনি তো আপনার পোস্টের তলায় এসে ন্যুড পোস্ট করেননি, নিজের দেওয়ালে নিজের ইচ্ছায় করেছেন, সম্পূর্ণ অন্য প্রেক্ষিতে অন্য সময়ে করেছেন।

এবার আপনার যদি ন্যুড বিষয়ে কোনও অস্বস্তি থেকে থাকে সেটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমি আপনার থেকে অনেকটাই ছোট, কিন্তু আমার বড় হয়ে ওঠার ভিতরেও তো শরীর বিষয়ে সচেতনতা খুব প্রকটভাবে ঢুকে ছিল। ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ রিলিজের পরের পুজোয় পাড়ার এক মেয়ে করিশমা কাপুরের মত ক্রপ টপ আর মিনিস্কার্ট বানিয়ে পরেছিল শখ করে। তাকে নিয়ে চোখ টিপে গুজগুজ-ফুসফুস করতে আমিও ছাড়িনি। একটা বয়স পর্যন্ত হাতকাটা জামা পরাকে অসভ্য মেয়ের লক্ষণ হিসেবে জানতাম। এই ভাবনার দৈন্য নিজেকেই কাটাতে হয়েছে, বহু দিনের চেষ্টায়। এটা যে ভাবনার দৈন্য সেটাই মাথায় ঢুকেছে অনেক পরে। মাথার ভিতরে বসে থাকা মরাল মোড়ল অনেক কিছুতেই নাক সিঁটকোয় এখনও। কিন্তু সেই মোড়লের মোড়লিকে অতিক্রম করাটাও তো নারীবাদী হিসেবে আমাদের কর্তব্য। গণপরিসরে যখন আপনি কোনও বক্তব্য রাখছেন, সে যতই ব্যক্তিগত মত হোক না কেন, এটুকু অনুশীলন তো প্রত্যাশিত, তাই না?

কিন্তু আপনি বলবেন আপনার বক্তব্য ন্যুড বিষয়ে নয়, সেই ন্যুড শিল্পসম্মত কিনা তা নিয়ে। আপনার কাছে শিল্পসম্মত ন্যুড হলেন মেরিলিন মনরো, বসন্তসেনা, বত্তিচেলির ভেনাস। দেহের ত্বক খসখসে হলে, দেহে মেদের বণ্টন ‘সুষম’ না হলে ন্যুড শিল্পসম্মত নয়, কারণ সেই শরীরে ‘বিভঙ্গ’ মানায় না। অর্থাৎ, আপনার দৃষ্টিতে ন্যুড শিল্পসম্মত ও সুন্দর হয়ে ওঠার অন্যতম শর্ত হল বিভঙ্গের উপস্থিতি। এরপর প্রেক্ষাপট। শিল্পসম্মত ন্যুডের অনুষঙ্গে থাকে সাটিনের চাদর, স্বর্গের অপ্সরা, মন্দিরগাত্রের কারুকাজ। ৮০ টাকার ভাড়া ঘরে, ফুটপাথে কেনা গোলাপি চাদরে বসে, পিছনে পরীর বদলে দড়ি থেকে গামছা ঝুলতে থাকলে বুঝতে হবে সেখানকার বাসিন্দা গরুর দুধ দোয়ান। অর্থাৎ সুন্দর হতে গেলে গরুর দুধ দোয়ানো যাবে না, এবং পরী নামানোর সাম্যর্থ না থাকলেও অন্তত সাটিনের চাদর কেনার রেস্ত থাকতে হবে।

বুঝলুম।

প্রথমত, আপনার মন্তব্য থেকে যা বোঝা গেল দারিদ্রের চিহ্ন সৌন্দর্যের অন্তরায়। নাকি আপনার মতে দারিদ্র নিহিত ভাবেই অসুন্দর এবং সৌন্দর্যের চর্চা বা প্রকাশ ঘটাতে গেলে ধনী হতে হয়, নাহলে অধিকারে বাধে? আপনি তো একটা গণতান্ত্রিক দেশে বাস করেন, সাম্যবাদী জীবনযাপন করেন কিনা জানি না কিন্তু অন্তত সাম্যবাদী আদর্শটা অনুসরণীয় এটা তো নিশ্চয় মনে করেন? নাকি করেন না? সোজাসাপ্টা কথা বলেন বলে আপনি গর্ব করেছেন দেখছি। তাহলে কি ধরে নিতে হবে এটা আপনি সত্যি সত্যিই মনে করেন? তাহলে তো মশাই এ দেশের ৯৯% মানুষের সুন্দর হতে অধিকারে বাধবে। এ বার আপনার কথা যদি দেশের ৯৯% মানুষকে কুৎসিত শ্রেণীতে ফেলে দেয়, তাহলে সেই শ্রেণীর প্রতিনিধিরা তো খেপে যাবেই। গজদন্ত মিনারে বসে নীচের লোককে গালি দিলে যদি পালটা গালি হাওয়ায় ভেসে মিনারের জানলা দিয়ে ঢুকে পড়ে, সেটুকু তো আপনার সোজা কথার মূল্য বলেই ধরতে হবে। এ তো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার গল্প। এখানে উইচ হান্ট আনছেন কেন? উইচ হান্ট অনেক বিষম বস্তু। সে সব আপনার মত গজদন্ত মিনারবাসীদের সঙ্গে কোনও কালেই হয়নি, এখনও হয় না। এখানে আপনি যাঁদের অপমান করেছেন তারা আপনাকে কিঞ্চিৎ পালটা অপমানের চেষ্টা করেছে মাত্র, তাও পারেনি বিশেষ। অত চাপ নেবেন না। একটু চা খান বরং ব্যালকনিতে বসে। মাথা ঠান্ডা হবে।

দ্বিতীয়ত, সুন্দরকে যে সীমার মধ্যে আপনি বেঁধে ফেলছেন তা একদমই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ। ভেনাস ও বসন্তসেনা আক্ষরিক অর্থেই পুরুষসৃষ্ট। মেরিলিন মনরোর বিভঙ্গ সরাসরিই পুরুষের কামোদ্দীপন নিমিত্ত সাজানো। ওরকম বেঁকেচুরে কেউ ঘুমোয় না, আমিও না আপনিও না। এবার তা সুন্দর নয় আমি একবারও বলছি না। এই সবক’টি উদাহরণই প্রবল সুন্দর, আমি সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু এটাই শুধুমাত্র সুন্দর এর বাইরে কিছু সুন্দর নয়, এই ধারণাটাই মারাত্মক। সেই ধারণাকে প্রকৃতির উপর চাপিয়ে দেওয়া তো আরওই মারাত্মক। মানুষের আবির্ভাবকাল থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সুন্দরের ধারণা কী বিচিত্র ভাবে বদলে বদলে গেছে তা আপনি জানেন না? প্রাচীন গ্রিসে উঁচু কপাল আর জোড়া ভুরুকে সৌন্দর্যের পরাকাষ্ঠা বলে ধরা হত। আজকে কপাল করে জোড়া ভুরু পেলে আপনি থ্রেডিং করাতে ছুটবেন। চিনে একসময় উচ্চবংশের রমণীদের পায়ের পাতা ছোটবেলাতেই ভেঙে দিয়ে আঁট করে ফিতে বেঁধে রাখা হত যাতে আর বাড়তে না পারে। চার ইঞ্চির পা না থাকলে আর সুন্দর কোথায়? ভাবতে পারবেন এখন? আপনি মুক্তমনা, আপনি হয়তো মানেন না, কিন্তু আপনার বাড়ির মাইলখানেকের মধ্যেই এমন একাধিক মানুষ পেয়ে যাবেন যাঁদের কেউ কোনও দিন কামনা করেনি শুধুমাত্র গায়ের রঙ কালো বলে। নন্দিতা দাস, স্মিতা পাতিল তাঁদের মতে সুন্দর নন, আপনি কী তা মনে করবেন?

যুগ যুগ ধরে নারীর সৌন্দর্য নির্ধারিত হয়ে এসেছে পুরুষের কামনাকে সে কতটা উত্তেজিত করতে পারছে বা পারছে না তার নিক্তিতে। প্রতিটি সমাজের আছে আলাদা আলাদা ধারণা, সেই ধারণা আবার ব্যক্তিবিশেষে বদলে বদলে যায় তাঁর অভিজ্ঞতার পরিধির নীরিখে। এই যেমন বসন্তসেনা ও ভেনাস দু’টি আলাদা সৌন্দর্য ঘরানার প্রতিভূ। কিন্তু আপনার সৌন্দর্য ধারণার মধ্যে দু’জনেই আছেন কারণ আপনার বেড়ে ওঠা ও শিক্ষাদীক্ষায় উনিশ শতকের ইউরোপীয় মননের ছাপ, যা আমাদের উপনিবেশ-পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থার অনিবার্য ফলশ্রুতি। বিগত শতাব্দীতে পৃথিবী কিন্তু অনেকটা এগিয়ে গেছে। বিশেষ করে ইন্টারনেটের জন্ম হওয়ার পর থেকে মানুষের অভিজ্ঞতার সীমানা এক লাফে অনেকটা বিস্তৃত হয়ে গিয়েছে। আমি আজ কারিনা রাদিওনোভার ন্যুড আর্টও দেখতে পাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছি ন্যুড মাতৃত্বের উদ্‌যাপন, ন্যুড খেলোয়াড় সত্ত্বার উদ্‌যাপন। আপনার কাছে খবর পৌঁছয়নি বোধহয়, কিন্তু ন্যুড শিল্প একুশ শতকে এসে বদলে গিয়েছে আত্মসত্ত্বা প্রকাশের অন্যতম হাতিয়ারে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা নিজেদের শরীর উন্মুক্ত করছেন শুধুমাত্র এটাই দেখাতে যে কামনার উৎস হওয়া ছাড়াও তাঁদের শরীরের মূল্য আছে। যৌনপরিতৃপ্তির পরাকাষ্ঠা শুধু নয়, নারীশরীর মননের, ক্ষমতার, শক্তির, এমনকি হিংসার আশ্রয়স্থলও বটে। সৌন্দর্যের সেই নিক্তিতে ভিজে গামছা ঝোলা ভাড়ার ঘরে খসখসে চামড়ার ন্যুড সুন্দর বটে, কারণ তার প্রকাশে রাজনৈতিক সততা আছে। তা ঘোষিত ভাবেই প্রচলিত সৌন্দর্য চেতনার বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে, কারণ এই চেতনাকে প্রশ্ন করাই তার লক্ষ্য। এ বার সেই সুন্দর আপনার সুন্দর নাই হতে পারে, আপনার অভিজ্ঞতাজগতে হয়তো এই ধারণার প্রবেশ কোনও দিনও ঘটেনি। আপনার সমাজ-সংস্কৃতি আপনাকে এটা দেখতে শেখায়নি, তাই আপনি এটা দেখতে জানেন না।

প্রকৃতি সুন্দর-অসুন্দর জানে না। সে তার নিজের খেয়ালে চলে, সে স্বতই বহুস্বরা, বিচিত্ররূপী। এই বিপরীত যুগ্মপদে প্রকৃতিকে বাঁধার ধারণাটা একান্তই মানুষের তৈরি। আমি-আপনি বাঘিনীর বিভঙ্গে সৌন্দর্য খুঁজে পাই, সে নিজে এসব নিয়ে মোটেই মাথা ঘামায় না। আমাদের মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে সে ভোজ ছাড়া আর কিছুই ভাববে না। বাঘিনীর শরীরে বিভঙ্গ দেখতে পেতে হলে সেই দেখার শিক্ষা থাকা চাই। তিন বছরের শিশু বিভঙ্গ দেখতে পাবে না। সে বাঘিনীর হাঁ দেখবে, দাঁত দেখবে, ডোরা দেখবে, গর্জন শুনবে। সে ভয় পাবে। বাঘিনীর বিভঙ্গ দেখতে শিখতে হয়, এমনি এমনি দেখা যায় না। সেটা এক ধরণের শীলন, মনুষ্যসৃষ্ট শীলন। শীলনভেদেই স্থির হয় কোনও বস্তুর ভিতরে আপনি কী কী দেখতে পাবেন। প্রকৃতি স্থির করে না।

এবার আপনি যে একটা শিল্পবস্তুর রসগ্রহণ করতে পারেন না সেটা আপনার সেই নির্দিষ্ট ধরণের শিক্ষা বা শীলনের অভাব। কিন্তু আমি যা জানি না তাই অসুন্দর বা খারাপ, এটা তো মৌলবাদী মনোবৃত্তি।এবার আপনি পাবলিক ফিগার, আপনার লেখা বই পুরস্কার পায়, ভিনদেশী ভাষায় অনূদিত হয়। আপনার ব্যক্তিগত মতামতেরও বাজারমূল্য আছে। আপনার মৌলবাদী মতামত সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরলে তা পাঁচটা লোককে প্রভাবিত করে। তারা নিজেদের নিজেদের মৌলবাদী মনোভাবের স্বীকৃতি পায়, এবং সমাজে তথা সংস্কৃতিতে ভিন্নস্বরের গ্রহণযোগ্যতার জায়গা কিছুটা হলেও কমে আসে। কাজেই সংযত হোন। নিজে যা ভাবতে চান ভাবুন, যে সুন্দরের উদ্‌যাপন করতে চান করুন, কিন্তু নিজের সৌন্দর্যবোধের ধারণা প্রকৃতির উপর চাপিয়ে ফতোয়া জারি করবেন না দয়া করে। এটা অবৈজ্ঞানিক, অরাজনৈতিক, এবং অশিক্ষার পরিচায়ক।

আসলে সামাজিক মাধ্যম জিনিসটাকে ব্যবহার করতে আমরা অনেকেই জানি না। এখানে যা খুশি বলাটা আপাত ভাবে খুব সোজা, কারণ সামনাসামনি তো কেউই নেই। ফলে যে সব কথা মানুষের মুখের উপর বলতে আমাদের সহবতে বাধবে সে সব কথাও অনায়াসে আমরা বলে দিই। সামনের মানুষগুলোর শারীরিক উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করতে পারে না বলে আমাদের মস্তিষ্ক ধরে নেয় যে আমাদের কথা কেউ শুনতে পাচ্ছে না দেখতে পাচ্ছে না, আমার ফেসবুক ওয়ালে আমি যা খুশি লিখতে পারি তার কোনও বাস্তব প্রতিক্রিয়া হবে না। মানুষের মস্তিষ্ক এখনও ইন্টারনেট যুগের জন্য প্রস্তুত হয়নি আসলে, তাই অনেক ভুলভাল সংকেত আমাদের পাঠাতে থাকে।

কিন্তু ফেসবুকের কথার বাস্তব গুরুত্ব আছে। অর্ঘ্য বসুর আত্মহত্যা তার সবচেয়ে মর্মান্তিক উদাহরণগুলির মধ্যে একটি। আপনি সেই ঘটনায় খেপে গিয়ে এমন এমন কথা বলতে শুরু করলেন যা এর সঙ্গে সম্পর্কিতই নয়, এবং তার ফলশ্রুতিতে আরও বৃহত্তর নানা বিষয়কে অপমান করে বসলেন। শারীরিক সৌন্দর্য বা আর্থিক সচ্ছলতা, কোনওটাই কোনও মানুষের হাতে পুরোপুরি থাকে না। দুয়ের পিছনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পারিবারিক নানা বিষয় কাজ করে। সমাজস্বীকৃত সৌন্দর্য এবং আর্থিক সচ্ছলতা – এই দুইই সামাজিক ক্ষমতার মাপকাঠি। যাঁদের এগুলি নেই তাঁরা সমাজের দুর্বল, প্রান্তিক অংশ। তাঁদের হাতে সামাজিক ক্ষমতা নেই। আপনি প্রকৃত অর্থেই সমাজের উচ্চকোটির মানুষ, জাতে ব্রাহ্মণ, পেশায় বুদ্ধিজীবী। আপনার নিজের বাড়ি আছে, বাহন আছে, রোজ চার বেলা ভালোমন্দ খাওয়ার উপায় আছে, আর এসবের পরেও বিলাসদ্রব্যে ব্যয়ের মত উদ্বৃত্ত অর্থ আছে। আপনি ক্ষমতাসীন, সে ক্ষমতা আপনি চোখে দেখতে পান ছাই না পান। জীবনে অনেক কিছুই আপনার মসৃণ ভাবে জুটে যায় যার জন্য আমাদের রক্তঘাম ঝরাতে হয়।এবার এই ক্ষমতাসীন আপনার ব্যঙ্গের তীর যখন সমাজের ক্ষমতাহীনদের দিকে ঘুরে যায় তখন আপনার শিক্ষা বা সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ হয় বইকি। ব্যঙ্গ তো ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার অস্ত্র বলেই জানতাম, ক্ষমতা প্রয়োগের অস্ত্র তো তা নয়।

ভার্চুয়াল জগত মেয়েদের তথা প্রান্তিক মানুষদের আত্মপ্রকাশের একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে বাস্তব জগতে তাঁদের ক্ষমতাহীন অস্তিত্বের কারণেই। মিটু-র গুরুত্ব এখানেই যে তা নির্যাতিতদের কথা বলার ও শোনার একটা মঞ্চ তৈরি করেছে যা বাস্তবে নেই। বেসামাল প্রতিক্রিয়া বা খাপ পঞ্চায়েতি মনোবৃত্তি মিটু-র সমস্যা নয়, তা ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল রিয়ালিটি জগতটারই অন্তর্নিহিত সমস্যা। তার সমালোচনা একশো বার করুন, প্রান্তিক মানুষের আত্মপ্রকাশকে ব্যঙ্গ করছেন কেন? আপনার মত বিখ্যাত ও প্রভাবশালী মানুষের তো এ বিষয়ে আরও অনেকটা সচেতন হওয়া দরকার, তাই না?

আপনার বয়স হয়েছে জানি, কিন্তু নতুন কিছু শেখার জন্য বয়স কখনওই বাধা হয় না। একটু শিখতে চেষ্টা করুন। অহেতুক ঘৃণা না করে মনটা একটু খুলুন, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যন্ত্রণায় আছে, লড়াইয়ে আছে, তাদের প্রতি মায়া রাখুন একটু। সোজা কথা বলার একটা মোহ আছে জানি, স্পষ্ট কথা বলার মোড়কে অন্যকে অপমান করা বা ক্ষতিকর কথা বলাটা অনেক সোজা হয়ে যায়। আপনার ভিতরে ঘৃণা আছে অনেক, সব মানুষের ভিতরেই আছে। কিন্তু মায়াও আছে, সহমমর্মিতাও আছে, আছে অন্যের যন্ত্রণাকে অনুভব করার ক্ষমতাও। ক্ষমা করার ক্ষমতাও আছে, আমার আপনার সকলের। কথা হাটে ফেলে দেওয়ার আগে সেই প্রবৃত্তিগুলো দিয়ে একবার যাচাই করে নিন না। দেখবেন, এতটাও কঠিন কিছু নয়।

ভালো থাকবেন। ছেলেকে ভুলভাল শেখাবেন না। সে ভবিষ্যতের নাগরিক, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। শুভেচ্ছা রইল।

সঙ্গের ছবিটি প্রখ্যাত আর্ট ফোটোগ্রাফার জোয়েল পিটার উইটকিন-এর ‘স্যানিটরিয়াম’, ১৯৮৩ সালে তোলা। ছবিটি নেওয়া হয়েছে Dazed ম্যাগাজিনের অনলাইন ঠিকানা DazedDigital থেকে। 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s